ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য র্যানসমওয়্যার এক আতঙ্কের নাম। এটি এমন একটি Malware যা কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে আক্রমণ করে গুরুত্বপূর্ণ Data Encrypt করে দেয় এবং সেই ডেটা ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে টাকা দাবি করে।
গত কয়েক বছরে এই ম্যালওয়্যার Cyber Security Specialist থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবহারকারীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
Ransomware Attack: বিস্তার ও প্রভাব

সাম্প্রতিক সময়ে র্যানসমওয়্যার আক্রমণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সোফোসের “দ্য স্টেট অব র্যানসমওয়্যার রিপোর্ট ২০২২“ অনুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে শতকরা ৬৬ শতাংশ সংস্থা Ransomware এর আক্রমণের শিকার হয়েছিল। এই হার ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের এনক্রিপ্ট হওয়া ডেটা ফেরত পেতে গড়ে ৮ লাখ ১২ হাজার ৩৬০ ডলার পর্যন্ত মুক্তিপণ প্রদান করতে বাধ্য হয়েছে।
এর মধ্যে শতকরা ১১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ প্রদান করেছে।
র্যানসমওয়্যার কীভাবে কাজ করে?
র্যানসমওয়্যার সাধারণত ফিশিং ইমেইল বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে।
ইমেইলে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করা বা অচেনা ওয়েবসাইট ভিজিট করে ডাউনলোড করার কারণে বেশিরভাগ ডিভাইস র্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত হয়।
যদিও র্যানসমওয়্যার আক্রমণের আরও পদ্ধতি রয়েছে, তবে এগুলোই সবচেয়ে বেশি আক্রমনের পদ্ধতি।
এই ধরনের আক্রমণ সাধারণত একটি কম্পিউটার থেকে শুরু হয় এবং পরে তা সেই কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত অন্য ডিভাইসেও ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্ত হওয়া প্রথম কম্পিউটারকে টেকনিক্যাল ভাষায় “endpoint” বলা হয়।
আরও পড়ুন… সমাজ ও প্রযুক্তিতে Artificial Intelligence এর প্রভাব
Ransomware কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?
র্যানসমওয়্যার নিয়ে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এটি বেশিরভাগ সময় “endpoint” বা আড়ালে থাকে, অর্থাৎ এটি সহজে ধরা পড়ে না।
অনেক সময়, এটি নেটওয়ার্কের অন্যান্য ডিভাইসে ছড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
র্যানসমওয়্যার সাধারণত Background এ কাজ করে, যেখানে এটি ধীরে ধীরে একটি মেশিন থেকে আরেকটি মেশিনে ছড়িয়ে পড়ে।
এটি শুধু কম্পিউটারের data Encrypt করেই থেমে যায় না, বরং সংযুক্ত ফাইল, অন্যান্য workstation এবং এমনকি Backup data ও লক করে ফেলে।
যখন এটি পর্যাপ্ত ডেটা এনক্রিপ্ট করে ফেলে, তখন ভুক্তভোগীকে মুক্তিপণ (ransom) দাবি করে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।
Ransomware এবং মুক্তিপণ দাবি
বর্তমান সময়ে হ্যাকাররা মূলত Bitcoin বা অন্যান্য Cryptocurrency ব্যবহার করে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে।
কারণ এই ধরনের লেনদেন ট্রেস করা কঠিন। অনেক সময় তারা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
এই সময়ের মধ্যে মুক্তিপণ না দিলে, হ্যাকাররা ডেটা মুছে ফেলার বা চিরতরে lock করে রাখার হুমকি দেয়।
Ransomware থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়

Ransomware attack প্রতিরোধে এবং এর ক্ষতি এড়াতে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
নিচে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
১. নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন:
Important data র্যানসমওয়্যার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য। তাই নিয়মিতভাবে ডেটার Online and offline backup রাখুন এবং তা নিয়মিত আপডেট করুন।
২. ফাইল এক্সটেনশন চালু রাখুন:
ফাইলের প্রকৃত ধরণ চিহ্নিত করতে উইন্ডোজ বা অন্যান্য operating system এ ফাইল এক্সটেনশন চালু রাখুন। এটি সন্দেহজনক ফাইল সনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
৩. অপরিচিত ইমেইল ও সংযুক্তি থেকে সতর্ক থাকুন:
কোনো সন্দেহজনক Email or attachment ওপেন করা থেকে বিরত থাকুন। ইমেইলের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে তা ডাউনলোড বা ক্লিক করবেন না।
৪. অ্যাডমিন পারমিশন নিয়ন্ত্রণ করুন:
সাইবার সিকিউরিটির জন্য Administrator permissions নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। অপ্রয়োজনীয় Administrator permissions বন্ধ করে দিন এবং যথাযথ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা তৈরি করুন।
৫. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন:
Weak password র্যানসমওয়্যার আক্রমণকারীদের জন্য প্রধান প্রবেশদ্বার। পাসওয়ার্ড অন্তত ১২ অক্ষরের রাখুন এবং তাতে ক্যাপিটাল, স্মল লেটার, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্নের মিশ্রণ ব্যবহার করুন। উদাহরণ: Ju5t.LiKE#Th1s!@
।
প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের নিরাপত্তা নির্ভর করে আমাদের সতর্কতার উপর। আমরা নিজেরা সচেতন না হলে যে কোনো মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। হ্যাক হয়ে যেতে পারে আমাদের কম্পিউটার, মোবাইল বা আমাদের জীবন।
2 comments