আমি যখন ৫ বছর আগে ব্লগ লেখা শুরু করি, তখন কনটেন্ট তৈরি ছিল সবচেয়ে কঠিন ও সময়সাপেক্ষ একটি কাজ। আমি যখন প্রথম ChatGPT ব্যবহার শুরু করি, তখন বুঝি যে ChatGPT দিয়ে ব্লগ কনটেন্ট তৈরি করা কেবল সহজ নয়, বরং অনেক কার্যকর।
প্রতিটি পোস্টের জন্য আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা গবেষণা করতে হতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তি বদলেছে। ChatGPT এসেছে যেন এক বিপ্লব।
এখন আমি মাত্র ৩০ মিনিটে একটি Draft তৈরি করতে পারি। আমার ব্লগে কনটেন্টের সংখ্যা ও কোয়ালিটি—দুটোই বেড়েছে।
প্রথম দিকে আমি কেবল ইংরেজি ব্লগ লিখতাম। কিন্তু এখন বাংলা কনটেন্টের চাহিদা বেড়েছে।
পাঠকরা সহজ ভাষায় তথ্য খুঁজে পেতে চায়। আর ChatGPT সেই সহজ ভাষায়, মানুষের মত করে লেখা তৈরি করতে পারে।
এটি শুধু কনটেন্ট লেখে না, পুরো কনটেন্ট স্ট্রাকচার সাজিয়ে দেয়। আমি এখন অনেক কম সময়ে, বেশি প্রোডাক্টিভ কাজ করতে পারি।
এমন এক সময় ছিল যখন প্রতিটা আর্টিকেল নিয়ে চিন্তা করতে হতো—কীভাবে শুরু করবো, কোন পয়েন্টগুলো থাকবে, কীভাবে শেষ করবো।
এখন আমি কেবল আইডিয়া দেই, ChatGPT পুরো নকশা করে দেয়। এটা যেন আমার পার্সোনাল কনটেন্ট এসিস্ট্যান্ট।
যারা ব্লগিং করেন বা করতে চান, তাদের জন্য এটি অপরিহার্য টুল হয়ে উঠছে।
ChatGPT-এর সাহায্যে কনটেন্ট শুধু দ্রুত তৈরি হয় না, সেই কনটেন্টের গুণগত মানও অনেক ভালো হয়।
আর এটা সব ভাষাতেই কাজ করে। আমি বাংলা, ইংরেজি, এমনকি হিন্দিতেও কনটেন্ট তৈরি করেছি।
একেকটা ভাষায় tone বদলাতে বললেই বদলে যায়। এটা একদম মানুষের মত। আর এই কারণেই এটি ব্লগারদের জন্য এক অসাধারণ সহায়ক।
এই অংশে আমি ব্যাখ্যা করবো কীভাবে ChatGPT ব্যবহার করে ব্লগের কনটেন্ট তৈরি করবেন এবং সঠিক কীওয়ার্ড পরিকল্পনা করবেন।
ChatGPT কী এবং কেন এটি ব্লগের জন্য উপযুক্ত?

ChatGPT মূলত একটি AI রাইটিং টুল, যা OpenAI তৈরি করেছে।
এটি মানুষের মত করে কথা বলে, লেখে এবং উত্তর দেয়। ব্লগিংয়ের জগতে এটি এক ধরণের গেম-চেঞ্জার।
কারণ, আমি যখন সময় পাই না বা আইডিয়ার অভাবে ভুগি, তখন ChatGPT-ই আমাকে গাইড করে।
এই টুলটি GPT-4 এর মাধ্যমে ট্রেনড, যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের প্রায় সব তথ্য জানে।
আমি একবার চেয়েছিলাম “How to sell a domain name” নিয়ে একটা ব্লগ লিখতে।
ChatGPT শুধু টাইটেল দেয়নি, পুরো ব্লগের প্ল্যান করে দিয়েছিল। আমি তারপর সেটা নিজের মত করে সাজিয়ে লিখেছিলাম।
আজ সেই পোস্ট থেকে আমি প্রতিদিন AdSense ইনকাম পাই।
আরেকটি বিষয় হলো—ChatGPT টন অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরি করে।
আপনি যদি চান সহজ ভাষায় কনটেন্ট, সেটা দিতে পারবে। যদি বলেন প্রফেশনাল টোনে হোক, সেটাও দিবে।
আমি ChatGPT ব্যবহার করি শুধু ব্লগ না, Telegram কনটেন্ট, Freelancing প্রোফাইল, এমনকি YouTube স্ক্রিপ্ট লিখতেও।
কাজেই ChatGPT হচ্ছে একটা অল-ইন-ওয়ান রাইটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট।
ChatGPT ব্যবহার করে আমি এমন অনেক বিষয়েও লিখেছি যা আমি আগে জানতাম না।
ও আমাকে গাইডলাইন দিয়েছে, পরামর্শ দিয়েছে, এমনকি কোথা থেকে তথ্য পাবো তাও বলে দিয়েছে।
এটা এমন একটা টুল যা নতুনদের জন্য যেমন দরকারি, তেমনি অভিজ্ঞদের জন্যও সময় বাঁচায়।
আর সবচেয়ে বড় কথা, এটি দিয়ে আপনি নিজের মত করে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন।
AI হলেও এর লেখায় থাকে মানুষের মত ভাব, যা পাঠকদের সাথে কানেক্ট করতে সাহায্য করে।
Blog content planning and keyword research
আপনি যদি জানতে চান কীভাবে ChatGPT ব্যবহার করে ব্লগের কনটেন্ট তৈরি করবেন, তাহলে এই স্টেপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ChatGPT দিয়ে ব্লগ কনটেন্ট প্ল্যান করতে গেলে আগে সঠিক কীওয়ার্ড রিসার্চ জানা দরকার, যাতে লেখাগুলো SEO-বান্ধব হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো—keyword research। আপনি যদি জানেন না আপনার পাঠক কী খুঁজছে, তাহলে আপনি যা-ই লিখুন না কেন, কেউ পড়বে না।
আমি সাধারণত Google Trends, AnswerThePublic আর Ubersuggest ব্যবহার করি। তবে সব কিছুর আগে ChatGPT-কে কাজে লাগাই।
আমি বলি: “Generate 30 low competition keywords for a blog on digital marketing in Bangla.” ChatGPT আমাকে এমন কিছু কীওয়ার্ড দেয় যা আমি সাধারণ টুলে পাই না।
এরপর আমি সেই লিস্ট নিয়ে Ubersuggest-এ চেক করি Volume ও Difficulty দেখে।
যদি কমপিটিশন কম হয়, আমি সেটাকে টার্গেট করি।
আরো ভালো হয় যখন আমি ChatGPT-কে বলি: “Make a 30-day content calendar based on these keywords.” তখন আমি পুরো মাসের ব্লগ প্ল্যান পেয়ে যাই।
প্রতিদিন কী লিখবো সেটা নিয়ে আর ভাবতে হয় না। এইভাবে প্ল্যানিং করলে নিয়মিত পোস্ট হয়, ট্রাফিক বাড়ে এবং SEO ফলাফল ভালো হয়।
আমার এক ক্লায়েন্ট ছিল যার জন্য আমি একটি Travel Blog তৈরি করেছিলাম।
সে প্রতিদিনের জন্য কনটেন্ট আইডিয়া চাচ্ছিল। আমি ChatGPT দিয়ে প্রথমে একটি নীচ সিলেক্ট করলাম, তারপর ওই অনুযায়ী কীওয়ার্ড এবং ক্যালেন্ডার তৈরি করলাম।
সে এক মাসেই ১৫০% ট্রাফিক বাড়াতে সক্ষম হয়। কাজেই ব্লগ কনটেন্ট প্ল্যানিং এবং কীওয়ার্ড গবেষণায় ChatGPT একটি শক্তিশালী সহায়ক।
আমি সাধারণত ChatGPT দিয়ে ব্লগ কনটেন্ট-এর খসড়া লিখি, এরপর সেটাকে পর্যালোচনা করে মানুষসুলভ করে তুলি।
Article outline
অনেকেই ভাবেন কীভাবে ChatGPT ব্যবহার করে ব্লগের কনটেন্ট তৈরি করবেন, এই অংশে তার বাস্তব উদাহরণ দিয়েছি। আমি একবারও সরাসরি লেখায় যাই না। আগে Article outline তৈরি করি।
যেকোনো ব্লগ লেখার আগে আমি ChatGPT দিয়ে ব্লগ কনটেন্ট-এর একটি নির্দিষ্ট আউটলাইন তৈরি করি যাতে স্ট্রাকচার স্পষ্ট হয়।
যেমন, আমি যদি লিখি “AI দিয়ে কনটেন্ট লেখা”, তাহলে আমি ChatGPT-কে বলি: “Give me an outline for a 2000-word blog post with 10 subheadings.”
সে আমাকে Introduction, Benefits, Use Cases, Tools, Step-by-step Process, Editing Tips, SEO Strategy, etc. এমনভাবে সাজিয়ে দেয় যাতে flow থাকে।
আমি চাইলে তাতে নিজস্ব অভিজ্ঞতা যোগ করি। যেমন, আমি একবার ChatGPT দিয়ে Fiverr গিগের জন্য ব্লগ লিখেছিলাম।
Outline ছিল চমৎকার। আমি শুধু নিজের কথা আর case study যোগ করেছিলাম।
এইভাবে কাজ করলে আপনি কোন অংশে কী লিখবেন, সেটা স্পষ্ট থাকে। সময় বাঁচে, আর লেখা হয় গুছিয়ে।
ChatGPT-কে বললে, “Add internal linking ideas in the outline,” তখন সে কোথায় কোন পুরনো পোস্টের লিংক দিবেন তাও সাজিয়ে দেয়।
এটা SEO-র জন্য অনেক বড় সুবিধা। আমি প্রতিটি ব্লগ পোস্টে এমন করে structure সাজিয়ে নিই যেন search engine সহজে ধরতে পারে।
এছাড়াও outline তৈরির সময় আমি চাইলে ChatGPT-কে বলতে পারি, “Make the tone friendly and suitable for beginner bloggers.” তখন আমি যাদের জন্য লিখছি, সেই অনুযায়ী ভয়েস ঠিক থাকে।
এটা আমার পাঠকের সাথে আরও গভীর সংযোগ তৈরি করে। আর এটাই একটা ভালো ব্লগের মূল চাবিকাঠি।
Content quality and depth
ChatGPT দিয়ে ব্লগ কনটেন্ট লিখলেও মান বজায় রাখতে হলে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও গভীরতা যুক্ত করাটা জরুরি।
Content ভালো না হলে, SEO কাজ করবে না। AI-generated content অনেক সময় shallow হয়ে যায়।
তাই আমি সব সময় ChatGPT-কে specific prompt দেই।
যেমন, “Include real-life example”, “Use case study from real data”, “Write like a human”.
আমার একটা অভিজ্ঞতা বলি। আমি “domain name flipping” নিয়ে লিখছিলাম।
ChatGPT ভালো draft দিয়েছিল, কিন্তু depth কম ছিল। তখন আমি Sedo আর GoDaddy-এর রিপোর্ট খুঁজি।
একটা case study পাই যেখানে একজন ১০ ডলার দিয়ে কেনা ডোমেইন ১৫০০ ডলারে বিক্রি করে।
আমি সেটা যোগ করি। এতে কনটেন্টের ভ্যালু বেড়ে যায়।
আপনিও চাইলে ChatGPT-কে বলুন: “Add a real story to this paragraph” অথবা “Expand this section with more depth.” এতে AI-generated কনটেন্ট অনেক বেশি human feel পায়।
SEO optimization

Yoast SEO অনুসারে কনটেন্ট অপ্টিমাইজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি সাধারণত এই কাজটাও ChatGPT দিয়ে করিয়ে নিই।
যেমন, আমি বলি: “Rewrite this paragraph using focus keyword ‘AI কনটেন্ট’ keeping Yoast SEO rules in mind.”
ChatGPT তখন ফোকাস কীওয়ার্ড, ট্রানজিশন শব্দ, শর্ট প্যারাগ্রাফ, মেটা ডিসক্রিপশন—সব কিছুর দিকেই খেয়াল রাখে।
তবে আমি শেষে নিজে পড়ে নিই। কারণ AI অনেক সময় over-optimize করে ফেলে।
আমার একটা SEO ফলাফল বলি। আমি “AI রাইটিং টুলস ২০২৫” নিয়ে পোস্ট লিখেছিলাম।
ChatGPT দিয়ে SEO করেছি। এখন সেই পোস্ট Google-এ ১ম পেজে আছে। CTR ৮.৫%।
আপনি যদি SEO অপ্টিমাইজ করতে চান, তাহলে ChatGPT-এর সাথে Yoast SEO রুলস শেয়ার করে কাজ করতে পারেন।
যাদের এখনও পরিষ্কার না কীভাবে ChatGPT ব্যবহার করে ব্লগের কনটেন্ট তৈরি করবেন, তাদের জন্য এই অংশে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ব্লগ কনটেন্ট প্ল্যান করার সময় আপনি চাইলে Ahrefs-এর এই গাইড থেকে কীওয়ার্ড রিসার্চ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।
Content re-organisation and editing
একটা কনটেন্ট লেখা মানেই কাজ শেষ নয়। Edit করতে হয়। রি-অর্গানাইজ করতে হয়।
আমি ChatGPT কে বলি: “Check if the flow of this article is logical” বা “Reorder the paragraph for better storytelling.”
অনেক সময় আমি কনটেন্টের tone চেঞ্জ করি। শুরুতে যদি informative হয়, তাহলে শেষের দিকে storytelling করি। এতে পাঠক ধরে রাখে।
Editing-এ আমি Hemingway App আর Grammarly ব্যবহার করি।
কিন্তু ChatGPT দিয়ে Language Polishing করি। যেমন বলি, “Make this paragraph more conversational”।
তাতে খুব চমৎকার রেজাল্ট পাই।
Creating different types of blog content
ChatGPT শুধু informative পোস্ট লেখে না। আপনি চাইলে এটি দিয়ে Tutorial, Review, Listicle, Case Study এমনকি Email Content-ও তৈরি করতে পারেন।
আমি একবার একটি SaaS টুলের জন্য review লিখছিলাম।
ChatGPT-কে বলি: “Write a detailed review of Ubersuggest in Bangla with pros, cons, and user experience.” তারপর সেটাকে নিজের ভাষায় ঠিক করে ব্লগে দেই।
তাছাড়া, ChatGPT দিয়ে আমি Newsletter ও বানাই। অনেকবার আমার পাঠক বলেছেন, “ভাই আপনি এত সুন্দর লিখেন কীভাবে?”
আমি শুধু হেসে বলি, “AI একটু হেল্প করে।” তবে আমি বলি না ChatGPT ই পুরো লেখে না।
আমি ঠিক করে দেই, সাজিয়ে দেই, গল্প বানিয়ে দেই। আপনি চাইলে ChatGPT-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট OpenAI ChatGPT থেকে সরাসরি টুলটি ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কথা
আজকের যুগে ব্লগিং মানে শুধু লিখে ফেলা না। এটা এক ধরণের স্ট্র্যাটেজি।
আর এই স্ট্র্যাটেজিকে সহজ করে তুলেছে ChatGPT। আপনি যদি এই টুলটা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে কনটেন্ট লেখা শুধু সহজ নয়, উপার্জনের পথও খুলে যাবে।
আমি নিজে ChatGPT দিয়ে ব্লগিং শুরু করে এখন প্রতি মাসে ৮০০০+ অর্গানিক ট্রাফিক পাই। AdSense, Affiliate ও Sponsorship—সবকিছুতে ইনকাম হচ্ছে।
এই পোস্টে আমি যা যা দেখালাম—Keyword Research, Article Planning, Drafting, Editing, SEO, Optimization, সব কিছুই আমি নিজে প্রতিদিন করি।
আপনিও চাইলে শুরু করতে পারেন। ভুল করবেন, শিখবেন, আবার চেষ্টা করবেন।
ChatGPT আপনার সহকারী। আপনি যদি নিজের অভিজ্ঞতা আর গল্প যোগ করতে পারেন, তাহলে কনটেন্ট হবে একেবারে Real।
আজ এখানেই শেষ করছি। যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে শেয়ার করুন, আর যদি কোন প্রশ্ন থাকে, নিচে কমেন্ট করুন।