নতুন বাবা-মার জন্য শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। অনেক অজানা বিষয়, নতুন অভিজ্ঞতা আর দায়িত্ব মিলিয়ে প্রতিটি দিনেই একটা যুদ্ধের মতো মনে হতে পারে। তবে সঠিক Newborn Care সম্পর্কে ধারণা থাকলে এই সময়টা অনেক সহজ হয়। এই গাইডে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করবো কীভাবে একজন ব্যস্ত বাবা-মা নবজাতকের যত্নে পারদর্শী হতে পারেন।
নতুন বাবা-মা হওয়া জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় অভিজ্ঞতা। কিন্তু একই সঙ্গে এটি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়ও। আপনার নবজাতকের সঠিক যত্ন নেওয়া শুধু তার সুস্থতার জন্য নয়, বরং আপনার মানসিক শান্তির জন্যও জরুরি। অনেক নতুন অভিভাবক হঠাৎ করে দায়িত্বের চাপ অনুভব করেন। তাই শুরুতেই বোঝা জরুরি যে নবজাতকের যত্ন একটি ধীর প্রক্রিয়া। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজ মিলিয়েই তৈরি হয় তার সুস্থ ভবিষ্যৎ।
নবজাতকরা অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। তাদের শরীর এখনও পুরোপুরি শক্ত হয়নি। তাই প্রতিটি কাজ সতর্কতার সঙ্গে করা প্রয়োজন। যেমন—দুধ খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, স্নান করানো কিংবা ডায়াপার পরিবর্তন করা। এসব কাজ হয়তো সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু প্রতিটিতে রয়েছে বিশেষ কৌশল। এগুলো না জানলে শিশুর অস্বস্তি বাড়তে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
আজকের ব্যস্ত পৃথিবীতে বাবা-মায়ের হাতে সময় কম থাকে। তবুও শিশুর যত্নে সময় দেওয়া অপরিহার্য। আপনার কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যেও শিশুর প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে হবে। এই যত্নের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে একটি সুস্থ, সবল, এবং সুখী ভবিষ্যৎ। তাই শুরু থেকেই ধৈর্য ধরে এগোতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, জীবনের প্রথম ছয় মাস শিশুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে সঠিক যত্ন, সঠিক পুষ্টি এবং ভালোবাসা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আপনি যদি শুরু থেকেই সঠিক কৌশল জানেন, তাহলে পরবর্তী সময় অনেক সহজ হয়ে যাবে।
সুতরাং, নবজাতক যত্নকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এটি একটি শিখন প্রক্রিয়া। প্রতিটি বাবা-মাকে এই পথ পাড়ি দিতে হয়। একদিনে কেউই এক্সপার্ট হয় না। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে। আর এই Survival Guide সেই যাত্রাকে সহজ করে তুলবে।
Page Contents
মায়ের দুধ খাওয়ানো ও পুষ্টি
শিশুর জীবনের প্রথম খাবার হচ্ছে মায়ের দুধ। এটি শুধু খাবার নয়, এটি শিশুর জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। মায়ের দুধে রয়েছে এমন সব উপাদান যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নবজাতকের জন্য প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধই যথেষ্ট। এই সময়ে অন্য কোনো খাবার বা পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
দুধ খাওয়ানোর সময় মায়েরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন—সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকা। কারণ মায়ের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা সরাসরি দুধের গুণগত মানকে প্রভাবিত করে।
অনেক সময় নতুন মায়েরা দুধ খাওয়ানোর সঠিক কৌশল জানেন না। এতে শিশুর অস্বস্তি হয় এবং সে ঠিকমতো খেতে পারে না। তাই প্রথম কয়েক দিন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শিশু সঠিকভাবে বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা তা খেয়াল করতে হবে। খাওয়ানোর সময় শিশুর নাক যেন খোলা থাকে এবং বুকের সঙ্গে শরীর লেগে থাকে।
শুধু শিশুর জন্য নয়, মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও দুধ খাওয়ানো উপকারী। এটি মায়ের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি মানসিকভাবে মা ও শিশুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে। তাই মায়ের দুধ খাওয়ানো কেবল একটি দায়িত্ব নয়, এটি একটি গভীর সম্পর্কের সূচনা।
শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান মায়ের দুধেই পাওয়া যায়। তাই যতটা সম্ভব নিয়মিত দুধ খাওয়ানো উচিত। যদি কোনো কারণে মায়ের দুধ পর্যাপ্ত না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে বিকল্প খাদ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
পুষ্টি নিয়ে কোনো আপস করা যাবে না। কারণ এই সময়েই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সঠিক পুষ্টির অভাবে ভবিষ্যতে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই দুধ খাওয়ানো এবং মায়ের নিজস্ব পুষ্টির দিকে সমান মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
নবজাতক জন্মের পর থেকে শুরু করে প্রথম বছর পর্যন্ত ধীরে ধীরে বড় হয় এবং এই সময়ে তাদের শরীর, মস্তিষ্ক ও মানসিক বিকাশের জন্য সঠিক যত্ন প্রয়োজন। Newborn Care tips মেনে চললে আপনার শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে। নবজাতক সাধারণত প্রতিদিন ১৬–১৭ ঘণ্টা ঘুমায়, তবে প্রতি ২–৩ ঘণ্টা পরপর খাওয়ানো দরকার। তাদের প্রধান চাহিদা হলো—breastfeeding বা formula feeding, ঘুম, ডায়াপার পরিবর্তন, আর নিরাপদ পরিবেশ।
একজন নতুন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে বুঝতে হবে, কান্নাই হলো শিশুর প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। কান্নার মাধ্যমে তারা ক্ষুধা, অস্বস্তি, ভেজা ডায়াপার, কিংবা ঘুমের চাহিদা জানায়। এইসব বিষয় ঠিকভাবে বুঝতে পারাই কার্যকরী infant care।
নবজাতকের ঘুম ও বিশ্রাম
শিশুর জীবনের প্রথম কয়েক মাসে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতক প্রতিদিন গড়ে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমায়। এই ঘুম শুধু তার শরীরকে বিশ্রাম দেয় না, বরং মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘুমের সময় শিশুর মস্তিষ্কে নতুন সেল তৈরি হয় এবং সে নতুন কিছু শেখার জন্য প্রস্তুত হয়।
ঘুম হলো নবজাতকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Newborn sleep patterns অনেকটা অনিয়মিত। তারা একবারে ২–৩ ঘণ্টা ঘুমায় এবং দিনে-রাতে মিলিয়ে মোটামুটি ১৬–১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। শিশুকে সব সময় নিরাপদভাবে বিছানায় শোয়াতে হবে।
সর্বদা পিঠের ওপর শোয়াতে হবে (Back to Sleep practice)। crib বা cot এ শক্ত mattress ব্যবহার করা উচিত। ঢিলেঢালা বালিশ, blanket বা soft toys crib এর মধ্যে রাখা উচিত নয়, কারণ এতে Sudden Infant Death Syndrome (SIDS) এর ঝুঁকি বাড়ে। এইসব নিয়ম মেনে চললে শিশুর ঘুম হবে নিরাপদ এবং আপনি হবেন নিশ্চিন্ত।
অনেক সময় বাবা-মা বুঝতে পারেন না যে তাদের শিশু পর্যাপ্ত ঘুম পাচ্ছে কিনা। শিশুর কান্না, খিটখিটে মেজাজ কিংবা খাবারে অনীহা প্রমাণ করে সে পর্যাপ্ত ঘুম পাচ্ছে না। তাই শিশুর জন্য একটি নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। আলো-ঝলমলে ঘরে বা শব্দপূর্ণ পরিবেশে শিশুর ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
শিশুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিয়মিত একটি রুটিন মেনে চলা ভালো। যেমন—প্রতিদিন একই সময়ে শিশুকে ঘুম পাড়ানো, হালকা লোরি শোনানো বা মৃদু আলো ব্যবহার করা। এগুলো শিশুর মস্তিষ্কে একটি সংকেত পাঠায় যে এখন ঘুমের সময়। ফলে সে সহজেই ঘুমিয়ে পড়ে।
শিশুর ঘুমের ভঙ্গির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসকেরা বলেন, শিশুকে সবসময় পিঠের ওপর শোয়ানো নিরাপদ। এতে হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি শিশুর মাথার নিচে বালিশ না দেওয়াই ভালো। কারণ এটি শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা তৈরি করতে পারে।
অভিভাবকদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো রাতের ঘুম। শিশুর ঘুম প্রায়ই ভেঙে যায় খিদে বা অস্বস্তির কারণে। তাই বাবা-মাকে রাতের বেলায় কয়েকবার উঠতে হয়। এই সময়ে মা-বাবার মানসিক ধৈর্য দরকার। মনে রাখতে হবে, এটি একটি সাময়িক পর্যায়। ধীরে ধীরে শিশুর ঘুমের সময় স্থিতিশীল হবে।
একটি আরামদায়ক ও নিরাপদ বিছানা শিশুর ঘুমের জন্য অপরিহার্য। অতিরিক্ত কম্বল বা খেলনা বিছানায় রাখা উচিত নয়। এগুলো শিশুর শ্বাসরোধের ঝুঁকি বাড়ায়। বরং হালকা চাদর ব্যবহার করা ভালো। এছাড়া ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা উচিত যাতে শিশু স্বস্তি পায়।
যত বেশি শিশুর ঘুম নিয়মিত হবে, তার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি তত দ্রুত হবে। বাবা-মাকেও এই সময়ে শিশুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। তাই শিশুর ঘুমকে গুরুত্ব দিন এবং সঠিক পরিবেশ তৈরি করুন।
নবজাতকের ডায়াপার ও পরিচ্ছন্নতা
নবজাতকের ডায়াপার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনে গড়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ বার ডায়াপার পরিবর্তন করতে হয়। কারণ শিশুর শরীর খুব দ্রুত ময়লা হয়ে যায়। ডায়াপার বেশি সময় ধরে ভিজে থাকলে ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। এতে র্যাশ হতে পারে, যা শিশুকে অস্বস্তিতে ফেলে।
Newborn diapering নতুন বাবা-মার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। ডায়াপার প্রতিবার ভিজে গেলে বা নোংরা হলে দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে। এতে diaper rash এর ঝুঁকি কমে। diaper change এর সময় baby wipes বা cotton ব্যবহার করে শিশুর সংবেদনশীল ত্বক পরিষ্কার করা জরুরি।
দিনে অন্তত ৮–১০ বার ডায়াপার পরিবর্তন করতে হতে পারে। diaper free time দেওয়া ভালো, এতে ত্বক বাতাস পায় এবং rash কম হয়। এছাড়া newborn hygiene এর জন্য প্রতিদিন অন্তত একবার sponge bath দেওয়া উচিত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর সুস্থতার মূল।
ডায়াপার বেছে নেওয়ার সময় মানসম্মত ব্র্যান্ড ব্যবহার করা ভালো। খারাপ মানের ডায়াপার শিশুর কোমল ত্বকে ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া সবসময় ডায়াপার পরিবর্তনের আগে এবং পরে শিশুর ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে হালকা গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিবার ডায়াপার পরিবর্তনের পর শিশুর ত্বক শুকিয়ে নেওয়া জরুরি। ভেজা অবস্থায় নতুন ডায়াপার পরালে ত্বকের সংক্রমণ বাড়তে পারে। অনেক সময় অভিভাবকরা শিশুকে বেশি আঁটসাঁট ডায়াপার পরান, যা ঠিক নয়। এতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। তাই ডায়াপার সবসময় আরামদায়কভাবে পরাতে হবে।
ডায়াপার র্যাশ হলে মায়ের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটি একটি সাধারণ সমস্যা। এই ক্ষেত্রে শিশুর ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে বিশেষ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো উপায়। তাই নিয়মিত সময়ে ডায়াপার পরিবর্তন করা উচিত।
শুধু ডায়াপার নয়, শিশুর গোসলও পরিচ্ছন্নতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নবজাতককে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার যথেষ্ট। তবে প্রতিদিন শিশুর শরীর ভালোভাবে মুছে দেওয়া জরুরি। এতে সে সতেজ থাকে এবং জীবাণুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত হয়।
গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। সাবান খুব বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। শিশুর ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই কোমল, তাই কেমিক্যালযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে ক্ষতি হতে পারে। বরং শিশুর জন্য নির্দিষ্ট সাবান ব্যবহার করা নিরাপদ।
অভিভাবকদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর নখ, কান এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার আছে কিনা। এগুলো অবহেলা করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ডায়াপার এবং পরিচ্ছন্নতা উভয় দিক থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
নবজাতকের সঠিক খাওয়াদাওয়া: স্তন্যদানের গুরুত্ব
নবজাতকের প্রথম ছয় মাসের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ খাবার হলো মায়ের দুধ। এই দুধে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিবডি থাকে। জন্মের পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে স্তন্যপান করানো জরুরি। কারণ এতে নবজাতক সহজে দুধ খেতে শিখে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
নবজাতকের skin অত্যন্ত কোমল। Newborn bathing প্রথম কয়েক সপ্তাহে sponge bath দিয়ে শুরু করতে হয়। umbilical cord stump শুকিয়ে পড়ে যাওয়ার পর normal bath দেওয়া যায়। গরম পানির বদলে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা উচিত।
শিশুর জন্য বিশেষ baby soap ও shampoo ব্যবহার করতে হবে। chemical free এবং dermatologist-tested products ব্যবহার করলে newborn skincare ভালো হয়। গোসলের পর নরম towel দিয়ে আস্তে আস্তে মুছে baby lotion বা oil ব্যবহার করলে ত্বক নরম থাকবে।
অনেক মা প্রথম দিকে ভয় পান, দুধ ঠিকভাবে আসছে কি না। এটি স্বাভাবিক। প্রথমে ঘন হলুদ রঙের কলোস্ট্রাম নিঃসৃত হয়। এই কলোস্ট্রাম শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণ সহায়ক। তাই এটি কখনোই ফেলে দেওয়া উচিত নয়।
শিশুকে প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর দুধ খাওয়ানো দরকার। রাতে জেগে উঠলেও দুধ দিতে হবে। শিশুর মস্তিষ্ক দ্রুত বেড়ে ওঠে, তাই পুষ্টি পাওয়া জরুরি। অনেকেই ভাবেন ফর্মুলা দুধ বেশি কার্যকর। কিন্তু মায়ের দুধের মতো কোনো খাবার নেই।
যদি মায়ের দুধ পর্যাপ্ত না হয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়। তবে এটি চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ ছাড়া ব্যবহার করলে ঝুঁকি হতে পারে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
খাওয়ানোর সময় মা ও শিশুর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর মাথা একটু উঁচুতে থাকতে হবে। নাক খোলা রাখতে হবে যাতে সহজে শ্বাস নিতে পারে। মায়ের আরামও জরুরি, না হলে দুধ খাওয়ানোর প্রক্রিয়া কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায় শিশু দুধ খেয়ে হঠাৎ কেঁদে ওঠে। এটি সাধারণত পেটের ভেতরে বাতাস জমে থাকার কারণে হয়। তাই প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে ডাকার (burping) ব্যবস্থা করতে হবে। এতে হজম সহজ হয় এবং অস্বস্তি কমে।
সঠিক খাওয়াদাওয়া শুধু শরীর নয়, শিশুর মানসিক বিকাশেও ভূমিকা রাখে। মা ও শিশুর মধ্যে আবেগী বন্ধন গড়ে ওঠে। গবেষণায় দেখা গেছে স্তন্যপান করানো শিশুদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতি ভালো হয়।
পরিশেষে বলা যায়, নবজাতকের খাওয়াদাওয়া শুধু একটি শারীরিক প্রক্রিয়া নয়। এটি একটি আবেগী ও মানসিক বন্ধনের অভিজ্ঞতা। মায়ের ভালোবাসা এবং শিশুর নিরাপত্তা দুটোই এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ঘুম ও রুটিন: শিশুর নিরাপদ বিকাশের জন্য জরুরি
নবজাতক জন্মের পর দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। সাধারণত প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুম প্রয়োজন হয়। তবে এই ঘুম টানা হয় না, ছোট ছোট সময়ে ভাগ হয়ে যায়। ঘুমের মধ্য দিয়েই শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ ঘটে।
অভিভাবকদের অনেক সময় বিরক্তি আসে, কারণ রাতে শিশু ঘন ঘন জেগে ওঠে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শিশুর পাকস্থলী ছোট হওয়ায় বারবার খাওয়া দরকার হয়। তাই রাতের ঘুমে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু এই ঘুম ভাঙা মানেই সমস্যা নয়।
Newborn health care এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো vaccination। জন্মের পর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে টিকা দেওয়া জরুরি। immunization schedule মেনে চললে শিশুকে অনেক মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
নিয়মিত pediatrician check-up করা উচিত। newborn screening test এর মাধ্যমে শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা পাওয়া যায়। শিশুর growth chart দেখে বুঝতে পারবেন সে স্বাভাবিকভাবে বড় হচ্ছে কিনা।
শিশুকে ঘুমানোর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নরম, সমতল বিছানায় শোয়াতে হবে। বালিশ ব্যবহার না করাই ভালো। মোটা কম্বল এড়িয়ে হালকা চাদর ব্যবহার করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত গরম বা ঢেকে রাখলে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ঘুমের সময় শিশুকে সবসময় চিৎ হয়ে শোয়াতে হবে। পাশ ফিরে বা উল্টো করে শোয়ানো বিপজ্জনক হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে চিৎ হয়ে শোয়ালে হঠাৎ মৃত্যু (Sudden Infant Death Syndrome) এর ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করা জরুরি। প্রতিদিন একই সময়ে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন। ঘুমানোর আগে হালকা আলো, শান্ত পরিবেশ এবং নরম সুরের গান শিশুকে আরাম দেয়। এতে দ্রুত ঘুম আসে।
শিশুর ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি শিশু ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চমকে ওঠে বা শ্বাসকষ্টে ভোগে, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। অনেক সময় এগুলো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
নবজাতকের ঘুম কেবল বিশ্রাম নয়, এটি বিকাশের একটি অংশ। ঘুমের সময়েই শিশুর মস্তিষ্ক নতুন জিনিস শিখে এবং কোষগুলো শক্ত হয়। তাই অভিভাবকের উচিত ঘুমকে অবহেলা না করা।
রাত জেগে শিশুর যত্ন নেওয়া অবশ্যই কঠিন। কিন্তু আপনি যখন জানবেন এই ঘুমই শিশুর ভবিষ্যৎ মস্তিষ্ক ও শরীরের জন্য ভিত্তি তৈরি করছে, তখন কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। তাই ধৈর্য ধরে শিশুর ঘুমের অভ্যাসকে গুরুত্ব দিন।
নবজাতকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা: প্রাথমিক সুরক্ষার ভিত্তি
শিশুর জন্মের পরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষায় ওজন, উচ্চতা, হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসপ্রশ্বাস পরিমাপ করা হয়। জন্মের প্রথম সপ্তাহে চিকিৎসকের কাছে অন্তত একবার যেতে হয়। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় শিশুর শরীর ঠিকভাবে মানিয়ে নিচ্ছে কি না।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হলো জন্মগত কোনো সমস্যা আছে কিনা তা শনাক্ত করা। অনেক সময় নবজাতকের জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে সহজে চিকিৎসা সম্ভব। তাই প্রতিটি পরীক্ষা গুরুত্ব সহকারে করা জরুরি।
টিকা হলো শিশুর রোগ প্রতিরোধের ঢাল। বাংলাদেশে Expanded Program on Immunization (EPI) অনুযায়ী জন্মের পরপরই শিশুকে বিসিজি, পোলিও ও হেপাটাইটিস-বি টিকা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে মারাত্মক সংক্রমণ থেকে নবজাতককে সুরক্ষা দেওয়া যায়।
শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য bonding অপরিহার্য। skin-to-skin contact, breastfeeding, eye contact এবং কোমলভাবে কথা বলা শিশুর সঙ্গে emotional bonding তৈরি করে।
শিশুর সঙ্গে সময় কাটানো, গান শোনানো বা lullaby গাওয়া তাকে শান্ত করে। এই bonding শুধু newborn development এ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে শিশুর character এবং emotional stability গড়ে তুলতে সহায়ক।
টিকা দেওয়ার পর অনেক সময় শিশুর শরীরে হালকা জ্বর বা ব্যথা হতে পারে। এটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অভিভাবকের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যায়।
চিকিৎসকরা শিশুর ওজন ও বৃদ্ধির হার নিয়মিত পরীক্ষা করেন। যদি ওজন না বাড়ে তবে খাওয়াদাওয়া ও ঘুমের সমস্যা থাকতে পারে। এই তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। তাই সময়মতো চেকআপ এড়ানো উচিত নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে টিকা নেওয়া শিশুদের মৃত্যুহার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এ তথ্য প্রমাণ করে নবজাতকের টিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই টিকা বিলম্ব না করে নির্ধারিত সময়ে দেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুধু রোগ খোঁজার জন্য নয়। এটি বাবা-মাকে আশ্বস্ত করে যে শিশুটি সঠিকভাবে বড় হচ্ছে। একইসঙ্গে তাদের মানসিক চাপও কমে। কারণ অনেক সময় সামান্য সমস্যা বড় মনে হয়, যা চিকিৎসকের পরামর্শে সহজেই সমাধান হয়।
পরিশেষে বলা যায়, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং টিকা শিশুর সুস্থ ভবিষ্যতের ভিত্তি। তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিত এটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা এবং অবহেলা না করা।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্নান: নবজাতকের আরাম ও সুরক্ষা
নবজাতকের শরীর খুবই কোমল। তাই তার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। জন্মের পর প্রথম কয়েকদিন শিশুকে স্নান করানো প্রয়োজন হয় না। কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দেওয়াই যথেষ্ট।
শিশুর নাভির গোড়া শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত স্নান না করাই ভালো। এ সময়ে পরিষ্কার তুলো ও অ্যালকোহল ব্যবহার করে নাভির স্থান শুকনো রাখতে হয়। নাভি শুকিয়ে গেলে ধীরে ধীরে নিয়মিত স্নান শুরু করা যায়।
স্নানের জন্য সবসময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। বেশি গরম বা ঠান্ডা পানি শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। শিশুর জন্য আলাদা বাথটাব বা প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করা নিরাপদ। এতে শিশু পিছলে পড়ার ঝুঁকি কমে।
স্নানের সময় শিশুর মাথা ও ঘাড় ভালোভাবে ধরে রাখতে হবে। কোমল সাবান ব্যবহার করা উচিত যা শিশুর ত্বকের জন্য উপযোগী। কোনোভাবেই প্রাপ্তবয়স্কদের সাবান ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এগুলো শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে।
স্নানের পর শিশুকে দ্রুত শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। তারপর পরিষ্কার কাপড় পরিয়ে দিতে হবে। শীতকালে শিশুকে স্নানের পর উষ্ণ স্থানে রাখা জরুরি, যাতে ঠান্ডা না লাগে।
শিশুর ত্বক সাধারণত শুষ্ক হয়। তাই স্নানের পর বেবি অয়েল বা লোশন ব্যবহার করলে ত্বক নরম থাকে। তবে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল তেল নিরাপদ হতে পারে।
পরিচ্ছন্নতা শুধু স্নানেই সীমাবদ্ধ নয়। শিশুর কাপড়, বিছানা ও খেলনা প্রতিদিন ধুয়ে শুকনো রাখতে হবে। নোংরা পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে নবজাতক আরামে থাকে এবং রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এটি শিশুর সুস্থতা এবং পরিবারের মানসিক শান্তির জন্য অপরিহার্য।
শিশুর জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। crib সব সময় sturdy হতে হবে। Newborn safety এর জন্য sharp objects, ছোট জিনিসপত্র বা choking hazards শিশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
ঘরে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কার সিট ব্যবহার করার সময় child safety seat ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সব সময় parental supervision থাকা উচিত। নিরাপদ পরিবেশই শিশুর সুস্থ বিকাশের ভিত্তি।
নবজাতকের কান্না ও তার অর্থ: কিভাবে বুঝবেন শিশুর চাহিদা
নবজাতকের কান্না তার একমাত্র ভাষা। শিশুটি ক্ষুধার্ত হলে, অস্বস্তিতে থাকলে বা ঘুমাতে চাইলে কান্নার মাধ্যমে তা প্রকাশ করে। তাই প্রতিটি অভিভাবকের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো কান্নার অর্থ বোঝা।
ক্ষুধার কারণে কান্না সবচেয়ে সাধারণ। এ সময় শিশুর মুখ খোলা থাকে এবং বারবার হাত মুখের দিকে নেয়। স্তন্যপান করালে কান্না থেমে যায়। এটি বোঝার অন্যতম সহজ উপায়।
কখনো আবার শিশুর ডায়াপার ভিজে গেলে অস্বস্তি থেকে কান্না শুরু হয়। এ কান্না সাধারণত হালকা হয় এবং ডায়াপার পরিবর্তন করলেই থেমে যায়। তাই নিয়মিত ডায়াপার চেক করা জরুরি।
শিশুর ঘুম ভাঙলেও কান্না হতে পারে। ঘুম ঘুম অবস্থায় শিশুর চোখ আধা খোলা থাকে এবং বিরক্তির স্বরে কান্না করে। এ সময় শান্ত পরিবেশে দোল দিয়ে ঘুম পাড়ালে সে দ্রুত শান্ত হয়।
পেটের গ্যাস জমলেও শিশুর কান্না বাড়ে। এ কান্না সাধারণত তীব্র হয় এবং শিশুটি পা মুড়ে ফেলে। খাওয়ানোর পর পিঠে হালকা চাপ দিয়ে ডাকার ব্যবস্থা করলে এ সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
অনেক সময় শিশুর কান্না মানসিক সংযোগের জন্যও হয়। সে মায়ের কোল বা স্পর্শ চাইতে পারে। কোলে নিলেই বা বুকের কাছে রাখলেই সে শান্ত হয়ে যায়। এভাবে মা ও শিশুর মধ্যে আবেগী বন্ধন তৈরি হয়।
তবে যদি কান্না অস্বাভাবিক হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে থামে না, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ কান্না কখনো কখনো অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে।
অভিভাবকের ধৈর্য এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বারবার চেষ্টা করে কান্নার কারণ খুঁজে বের করতে হয়। সময়ের সঙ্গে আপনি বুঝতে পারবেন কোন কান্না কী বোঝাচ্ছে।
ত্বক ও নাভির যত্ন: সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা
নবজাতকের ত্বক খুবই নরম ও সংবেদনশীল। জন্মের পর অনেক সময় শরীরে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। এগুলোর বেশিরভাগই সাময়িক এবং কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে পরিচ্ছন্নতা না মানলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
শিশুর শরীর প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে ঘাড়, কান ও হাতের ভাঁজে ময়লা জমতে পারে। এগুলো পরিষ্কার রাখলে ত্বক সুস্থ থাকে।
কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করার আগে সতর্ক হতে হবে। বাজারে অনেক বেবি প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, কিন্তু সবগুলো নিরাপদ নয়। হালকা সুগন্ধযুক্ত বা রাসায়নিকযুক্ত লোশন শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে প্রোডাক্ট ব্যবহার করা ভালো।
নাভির গোড়া শুকানো খুব জরুরি। জন্মের পর নাভি কয়েক দিনের মধ্যে শুকিয়ে যায় এবং পড়ে যায়। এ সময় নাভি শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হয়। নোংরা হাতে স্পর্শ করা একেবারেই উচিত নয়।
নাভির আশেপাশে যদি লালচে হয়ে যায়, দুর্গন্ধ বের হয় বা পুঁজ জমে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এগুলো সংক্রমণের স্পষ্ট লক্ষণ। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে জটিলতা বাড়তে পারে।
শিশুর ডায়াপার ব্যবহার করলে ত্বকের যত্ন আরও বেশি প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ সময় ভেজা ডায়াপার পরিয়ে রাখলে ডায়াপার র্যাশ হয়। তাই ঘন ঘন ডায়াপার পরিবর্তন এবং বাতাসে শুকিয়ে নেওয়া জরুরি।
অনেক মা-খালা দুধ বা তেল দিয়ে নাভি ভিজিয়ে রাখার অভ্যাস করেন। এটি একেবারেই ক্ষতিকর। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছু নাভিতে দেওয়া উচিত নয়।
ত্বক ও নাভির যত্নে সামান্য সচেতনতাই শিশুকে বড় ধরনের অসুখ থেকে বাঁচাতে পারে। তাই প্রতিদিনের পরিচর্যার মধ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও বন্ধন: মা–শিশুর আবেগী সম্পর্ক
নবজাতকের যত্ন শুধু শারীরিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগী বন্ধন শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনে সমান গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের প্রথম দিন থেকেই শিশু তার মায়ের কণ্ঠস্বর চিনতে পারে। তাই মায়ের সঙ্গে কথা বলা ও গান শোনানো শিশুকে নিরাপত্তা দেয়।
চোখে চোখ রাখা, হাসি দেওয়া এবং কোলে নেওয়া শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এভাবে শিশুর মস্তিষ্কে ইতিবাচক রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটায়, তারা ভবিষ্যতে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়।
অনেক মা সন্তান জন্মের পর প্রসবোত্তর বিষণ্ণতায় ভোগেন। এটি একটি সাধারণ মানসিক সমস্যা। এ সময় পরিবার ও স্বামীকে সহায়ক ভূমিকা নিতে হয়। মায়ের মানসিক সুস্থতা শিশুর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই মায়ের যত্ন নেওয়াও নবজাতকের যত্নেরই অংশ।
শিশু কান্না করলে মায়ের স্পর্শ বা কোলে নেওয়ায় দ্রুত শান্ত হয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। শিশুর মনে হয় সে নিরাপদ আছে। এভাবেই মা–শিশুর মধ্যে অদৃশ্য বন্ধন তৈরি হয়।
মানসিক বন্ধন শুধু মায়ের সঙ্গে নয়, বাবার সঙ্গেও গড়ে ওঠা উচিত। বাবা নিয়মিত শিশুর সঙ্গে খেললে বা কোলে নিলে শিশুর সামাজিক বিকাশ হয়। এতে পারিবারিক পরিবেশও উষ্ণ হয়।
পরিবারের অন্য সদস্যরাও যদি শিশুর যত্নে অংশ নেন, তবে মা স্বস্তি পান এবং চাপ কমে যায়। এভাবে সবার অংশগ্রহণ শিশুকে ভালোবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশে বড় হতে সাহায্য করে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শিশুর প্রথম পাঁচ বছর তার ব্যক্তিত্ব গঠনের মূল সময়। তাই এ সময়ে ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও মানসিক স্থিতিশীলতা দেওয়া খুব জরুরি।
অতএব, নবজাতকের যত্নের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগী বন্ধন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এটি শুধু শিশুর সুখী শৈশব নয়, ভবিষ্যতের সাফল্যও নিশ্চিত করে।
জরুরি পরিস্থিতি সামলানো: কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
নবজাতক যতই সুস্থ থাকুক, হঠাৎ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অভিভাবকের প্রস্তুত থাকা জরুরি। প্রতিটি মা–বাবাকে জানতে হবে কোন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
যদি শিশুর জ্বর ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে ওঠে, তবে দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে। ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় জ্বর বিপজ্জনক হতে পারে।
শিশু যদি হঠাৎ শ্বাসকষ্টে ভোগে বা বুক ওঠানামা স্পষ্ট দেখা যায়, এটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ। এ ধরনের পরিস্থিতি অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়।
ডায়রিয়া বা বমি নবজাতকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। শরীরে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দেয়। ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া বা প্রস্রাব কমে যাওয়া এ সমস্যার স্পষ্ট লক্ষণ। এ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না।
শিশু যদি একটানা কান্না করে এবং শান্ত না হয়, তবে এটি শরীরের ভেতরের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। একইভাবে যদি খাওয়াদাওয়া হঠাৎ বন্ধ করে দেয়, তবে দেরি না করে পরীক্ষা করা উচিত।
নাভির চারপাশে ফোলা, লালচে ভাব বা দুর্গন্ধও বিপদের সংকেত। কারণ নাভি সংক্রমণ শিশুর শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা জরুরি।
মনে রাখতে হবে, নবজাতকরা তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে না। তাই বাবা–মাকে লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সামান্য অসতর্কতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
অভিভাবকের শান্ত থাকা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আতঙ্কিত হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করুন এবং কোনো সমস্যা মনে হলে দ্বিধা না করে চিকিৎসকের কাছে যান।
উপসংহার
নবজাতকের যত্ন কোনো সহজ কাজ নয়। এটি ধৈর্য, সময় এবং ভালোবাসার সমন্বয়। আপনি হয়তো ভাবছেন সবকিছু ঠিকভাবে করছেন কিনা, কিন্তু মনে রাখবেন প্রতিটি শিশুই আলাদা। তাই অভিজ্ঞতা থেকে শেখা এবং শিশুর প্রয়োজন বোঝাই সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
সঠিক খাওয়াদাওয়া, নিরাপদ ঘুম, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা, পরিচ্ছন্নতা এবং মানসিক বন্ধন—সবকিছুই শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য জরুরি। আপনি যত বেশি সচেতন হবেন, আপনার শিশুর ভবিষ্যৎ তত বেশি নিরাপদ হবে।
আজকের বিশ্বে তথ্য সহজলভ্য, কিন্তু প্রতিটি তথ্যের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শকে সর্বাগ্রে রাখুন। আপনার পরিবার, বিশেষ করে বাবা–মা হিসেবে আপনার যত্নই নবজাতকের প্রথম প্রতিরক্ষা।
আপনার শিশুর প্রথম হাসি, প্রথম স্পর্শ, প্রথম ঘুম—সবকিছুই জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এই সময়গুলো যত্ন নিয়ে কাটালে শুধু শিশুই নয়, আপনিও মানসিক তৃপ্তি পাবেন।
তাই নবজাতকের যত্নকে বোঝা নয়, বরং আনন্দ হিসেবে নিন। এতে শিশুর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। আপনার ভালোবাসা ও যত্নই তার ভবিষ্যতের ভিত্তি।
Newborn Care একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে তেমনই ভালোবাসা আর আনন্দে ভরা। প্রতিটি দিন নতুন কিছু শেখায়। সঠিক feeding, sleep management, hygiene, vaccination, bonding এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করলে নবজাতক সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।
এই গাইডে বর্ণিত newborn care tips, newborn health, newborn sleep, এবং infant development সংক্রান্ত তথ্যগুলো আপনার parenting journey কে অনেক সহজ করবে। মনে রাখবেন, আপনি যত্নশীল থাকলেই আপনার সন্তান তার জীবনের সঠিক ভিত্তি পাবে।
FAQ: নবজাতকের যত্ন নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
১. নবজাতককে কত ঘন ঘন খাওয়াতে হবে?
নবজাতককে সাধারণত প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর খাওয়ানো দরকার। কারণ তাদের পাকস্থলী ছোট, তাই অল্প অল্প করে বারবার দুধ প্রয়োজন।
২. শিশুর ঘুমের স্বাভাবিক সময় কত ঘণ্টা হওয়া উচিত?
নবজাতক প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমায়। তবে এটি টানা নয়, ছোট ছোট ভাগে হয়।
৩. নবজাতকের জ্বর হলে কী করতে হবে?
যদি জ্বর ১০০.৪ ফারেনহাইটের বেশি হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
৪. শিশুর নাভি কীভাবে যত্ন নিতে হবে?
নাভি শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। ভিজে গেলে দ্রুত শুকিয়ে নিতে হবে। লালচে বা দুর্গন্ধ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
৫. মায়ের দুধ না আসলে কী করা উচিত?
প্রথম কয়েক দিনে দুধ কম আসা স্বাভাবিক। ঘন ঘন স্তন্যপান করালে দুধ বাড়ে। সমস্যা স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
1 thought on “How to Master Newborn Care: A Busy Parent’s Survival Guide”
Comments are closed.